ঢাকা ০৬:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৃষ্টিতে বেহাল ঢাকার রাস্তা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:০৬:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অগাস্ট ২০১৭
  • ২২৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি আর উন্নয়নের ধকলে রাজধানীর রাস্তাগুলোর বেহাল অবস্থা। এর মধ্যে আবার বৃষ্টি যোগ হওয়ায় একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে রাজধানীর অলিগলিসহ প্রধান রাস্তাগুলো। অনেক এলাকার রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে যাওয়া রাস্তা দিয়ে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। গতকাল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও রাজধানীর ব্যস্ত এলাকাগুলোতে যানজটের কবলে পড়ে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। শুধু ভোগান্তি নয়, খানাখন্দে ভরা রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ।
যাত্রাবাড়ী থেকে শনিরআখড়া পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে গত ৮ মাস ধরে। এই ৮ মাসে কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। শনিরআখড়া থেকে যাত্রাবাড়ীর দিকে আসতে ৮ লেনের মহাসড়কের পরই মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার। দুদিকে রাস্তার জায়গা রাখা হয়নি। ফ্লাইওভারের শুরু থেকে কুতুবখালী থেকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পর্যন্ত রাস্তার প্রস্থ ২০ ফুটও হবে না। সেই রাস্তার পাশে ড্রেন তৈরী করা হচ্ছে। এতে ২০ ফুটের সিংহভাগ কাটা পড়েছে। যে সব গাড়ি ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে যাত্রাবাড়ীর দিকে যাবে সেগুলোর জন্য মহাবিপদ। একেতো সরু রাস্তা তার উপর বৃষ্টিতে খানাখন্দে ভরে গেছে। গতকাল দুপুরেও দেখা গেল সেখানে এক কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ যানজট। সেই যানজটের প্রভাব পড়েছে ফ্লাইওভারেও। ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়ও আটকে ছিল শত শত গাড়ি। ভুক্তভোগিরা জানান, যাত্রাবাড়ীতে ফ্লাইওভারের দুপাশেই রাস্তার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হয়নি। তবে একদিকে পাইকারী কাঁচাবাজারের অংশে রাস্তা প্রশস্ত করার মতো জায়গা আছে। বিপরীত দিকে একেবারে নেই। অনেক আগে থেকেই এই রাস্তার বেহাল অবস্থা। তার উপর বৃষ্টিতে খানাখন্দে ভরে গেছে। সরু রাস্তার পাশেই তৈরী করা হচ্ছে ড্রেন। রাস্তা থেকে উঁচু হওয়ায় নতুন ওই ড্রেন সরু রাস্তাকে আরও সরু করেছে। কোনোমতে একটা গাড়ি চলতে পারে। বিপরীত দিকে রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে সেই ৮ মাস ধরে। এখনও তা শেষ হয়নি। গত ঈদুল ফিতরে ঢাকা থেকে দেশের পূর্বাঞ্চলের ১৮ টি জেলার কয়েক লাখ ঘরমুখি মানুষের দুর্ভোগের কারণ ছিল এই রাস্তা। ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে বের হতেই সময় লেগেছে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। এবারও তার ব্যতয় ঘটবে না বলেই ভুক্তভোগিদের আশঙ্কা। যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরার দিকেও রাস্তার বেহাল দশা। অন্যদিকে, যাত্রাবাড়ী থেকে পোস্তগোলার রাস্তাটিও চার লেন করার কাজ সবেমাত্র শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টি আর পানিবদ্ধতায় রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকার রাস্তার বিটুমিন উঠে গেছে। ইট, সুরকি খুলে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। এই গর্তগুলোই এখন মরণ ফাঁদ হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে এস গর্তে। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাড্ডা পর্যন্ত রাস্তায় ড্রেনেজ লাইনের রিং বসানোর জন্য খুঁড়ে এমনিতেই বেহাল অবস্থা হয়ে আছে। তিন লেনের রাস্তার এক লেন দিয়ে যাতায়াত করছে যানবাহন। এর মধ্যে আবার বৃষ্টির কারণে খোঁড়া জায়গাগুলোতে জমেছে পানি। এ ছাড়া রাস্তার মাঝখানে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। ভুক্তভোগিরা জানান, কুড়িল থেকে বাড্ডা হয়ে রামপুরা পর্যন্ত রাস্তাটি দিয়ে যানবাহন চলতে গিয়ে যানজটের কবলে পড়ছে। এতে করে আধা ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে লাগছে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। অন্যদিকে, গাবতলীতেও রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে। সেখানেও ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। মিরপুরের বাসিন্দা খোদ একজন সরকারী কর্মকর্তা জানান, রাস্তাগুলো থেকে ড্রেনগুলো উঁচু করা হয়েছে। এছাড়া রাস্তার মধ্যে ম্যানহোলগুলোও রাস্তা থেকে উঁচু করায় গাড়ি চলতে অসুবিধা হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের উচিত এগুলোর দিকে নজর দেয়া। অন্যদিকে, আগারগাঁও, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মিরপুর ১০ নং সেকশনের রাস্তাগুলোও ভেঙ্গে একাকার হয়ে আছে। বৃষ্টিতে কোনো কোনা রাস্তা পানি তলিয়ে যাওয়ায় বিপদ আরও বেড়েছে।
জানা গেছে, রাজধানীর যে কোনো অংশে রাস্তা কেটে উন্নয়নমূলক কাজ করতে হলে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন থেকে অনুমতি নিতে হয়। সরকারি সংস্থারও রাস্তা কাটার সময় সিটি করপোরেশনকে নির্ধারিত ফি দিতে হয়। ডিএনসিসি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাস্তা খনন ফি হিসেবে পেয়েছে ৩২ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরে সংস্থাটি এ খাত থেকে ৫০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ডিএসসিসি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাস্তা খনন ফি হিসেবে পেয়েছে ২৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে রাস্তা খননের ফি হিসেবে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে ২৫ কোটি টাকা। অথচ বছরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ির পর রোকেয়া সরণির রাস্তাটি মেরামত করেনি ডিএনসিসি। এই রাস্তায় চলাচলকারী মানুষের দুর্ভোগ নিত্যদিনের।
সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, ঢাকা শহরের কোনো সড়কের পাঁচ থেকে ১০ টনের ওপরে ভার নেওয়ার সক্ষমতা নেই। কিন্তু বাস্তবে ৪০ টনের যানবাহনও চলাচল করে। রাজধানীর রামপুরা-আমুলিয়া সড়কের ভার বহনের ক্ষমতা পাঁচ টন। সেই রাস্তায় চলে ৩০-৪০ টন পণ্যবাহী লরি- ট্রেইলর। এতে অল্প দিনেই রাস্তাটি ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মিরপুর-কালশী সড়কে বৃষ্টি হলেই জমে যায় কোমর পরিমাণ পানি। আর টানা বৃষ্টি আর পানিবদ্ধতায় রাস্তার বিটুমিন উঠে গিয়ে পুরো রাস্তাজুড়ে তৈরি হয়েছে গর্ত। এই ভাঙাচোরা রাস্তাগুলোতে গাড়ি চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চালকদের। আলাপকালে ঢাকার পরিবহন ব্যবসায়ীদের একজন বলেন, ঢাকা শহরে এখন যেগুলো বাস বা মিনিবাস চলাচল করছে সেগুলোর বয়স ৫ বছরের বেশি নয়। বেশিরভাগ গাড়িই নতুন। কিন্তু শুধুমাত্র রাস্তার কারণে গাড়িগুলো লক্কর ঝক্কর হয়ে গেছে। ওই মালিক বলেন, এই রাস্তায় গাড়ি চালানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। এমনিতেই সারা দিন যানজট লেগে থাকে। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় যাতায়াতে যেমন সময় লাগছে, আবার ঝুঁকিপূর্ণও হয়ে গেছে। গাড়ির চাকা গর্তে পড়ে টায়ার কেটে যাচ্ছে। শুধু গাড়ি চলাচল নয়, খানাখন্দে ভরা রাস্তার কারনে স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীদেরও দারুন কষ্ট হচ্ছে। বৃষ্টিতে রাস্তা ডুবে থাকায় শিশুদেরকে ভ্যানে করে স্কুলে পাঠাতে পারছেন না অবিভাবকরা। আবার পায়ে হেঁটে বা রিকশায় গেলেও বিপদ। এমতবস্থায় সবাই সঙ্কটের মধ্যে পড়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষা এলেই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু করে নগরীর ইউটিলিটি বিভাগগুলো। এটা বন্ধ করা দরকার। বিশেষ করে সমন্বয়হীনতার কারণে রাস্তাগুলো বেহাল দশায় পড়েছে। এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল হাসান বলেন, বর্ষায় উন্নয়ন কাজ করা উচিত নয়। এ নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সরাসরি নির্দেশনা আছে। বর্ষায় শুধু মেরামত কাজ করা যাবে। কিন্তু কেউই তা মানে না। এ জন্যই এই দুর্দশা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বৃষ্টিতে বেহাল ঢাকার রাস্তা

আপডেট টাইম : ০৩:০৬:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অগাস্ট ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি আর উন্নয়নের ধকলে রাজধানীর রাস্তাগুলোর বেহাল অবস্থা। এর মধ্যে আবার বৃষ্টি যোগ হওয়ায় একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে রাজধানীর অলিগলিসহ প্রধান রাস্তাগুলো। অনেক এলাকার রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে যাওয়া রাস্তা দিয়ে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। গতকাল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও রাজধানীর ব্যস্ত এলাকাগুলোতে যানজটের কবলে পড়ে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। শুধু ভোগান্তি নয়, খানাখন্দে ভরা রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ।
যাত্রাবাড়ী থেকে শনিরআখড়া পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে গত ৮ মাস ধরে। এই ৮ মাসে কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। শনিরআখড়া থেকে যাত্রাবাড়ীর দিকে আসতে ৮ লেনের মহাসড়কের পরই মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার। দুদিকে রাস্তার জায়গা রাখা হয়নি। ফ্লাইওভারের শুরু থেকে কুতুবখালী থেকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পর্যন্ত রাস্তার প্রস্থ ২০ ফুটও হবে না। সেই রাস্তার পাশে ড্রেন তৈরী করা হচ্ছে। এতে ২০ ফুটের সিংহভাগ কাটা পড়েছে। যে সব গাড়ি ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে যাত্রাবাড়ীর দিকে যাবে সেগুলোর জন্য মহাবিপদ। একেতো সরু রাস্তা তার উপর বৃষ্টিতে খানাখন্দে ভরে গেছে। গতকাল দুপুরেও দেখা গেল সেখানে এক কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ যানজট। সেই যানজটের প্রভাব পড়েছে ফ্লাইওভারেও। ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়ও আটকে ছিল শত শত গাড়ি। ভুক্তভোগিরা জানান, যাত্রাবাড়ীতে ফ্লাইওভারের দুপাশেই রাস্তার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হয়নি। তবে একদিকে পাইকারী কাঁচাবাজারের অংশে রাস্তা প্রশস্ত করার মতো জায়গা আছে। বিপরীত দিকে একেবারে নেই। অনেক আগে থেকেই এই রাস্তার বেহাল অবস্থা। তার উপর বৃষ্টিতে খানাখন্দে ভরে গেছে। সরু রাস্তার পাশেই তৈরী করা হচ্ছে ড্রেন। রাস্তা থেকে উঁচু হওয়ায় নতুন ওই ড্রেন সরু রাস্তাকে আরও সরু করেছে। কোনোমতে একটা গাড়ি চলতে পারে। বিপরীত দিকে রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে সেই ৮ মাস ধরে। এখনও তা শেষ হয়নি। গত ঈদুল ফিতরে ঢাকা থেকে দেশের পূর্বাঞ্চলের ১৮ টি জেলার কয়েক লাখ ঘরমুখি মানুষের দুর্ভোগের কারণ ছিল এই রাস্তা। ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে বের হতেই সময় লেগেছে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। এবারও তার ব্যতয় ঘটবে না বলেই ভুক্তভোগিদের আশঙ্কা। যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরার দিকেও রাস্তার বেহাল দশা। অন্যদিকে, যাত্রাবাড়ী থেকে পোস্তগোলার রাস্তাটিও চার লেন করার কাজ সবেমাত্র শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টি আর পানিবদ্ধতায় রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকার রাস্তার বিটুমিন উঠে গেছে। ইট, সুরকি খুলে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। এই গর্তগুলোই এখন মরণ ফাঁদ হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে এস গর্তে। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাড্ডা পর্যন্ত রাস্তায় ড্রেনেজ লাইনের রিং বসানোর জন্য খুঁড়ে এমনিতেই বেহাল অবস্থা হয়ে আছে। তিন লেনের রাস্তার এক লেন দিয়ে যাতায়াত করছে যানবাহন। এর মধ্যে আবার বৃষ্টির কারণে খোঁড়া জায়গাগুলোতে জমেছে পানি। এ ছাড়া রাস্তার মাঝখানে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। ভুক্তভোগিরা জানান, কুড়িল থেকে বাড্ডা হয়ে রামপুরা পর্যন্ত রাস্তাটি দিয়ে যানবাহন চলতে গিয়ে যানজটের কবলে পড়ছে। এতে করে আধা ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে লাগছে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। অন্যদিকে, গাবতলীতেও রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে। সেখানেও ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। মিরপুরের বাসিন্দা খোদ একজন সরকারী কর্মকর্তা জানান, রাস্তাগুলো থেকে ড্রেনগুলো উঁচু করা হয়েছে। এছাড়া রাস্তার মধ্যে ম্যানহোলগুলোও রাস্তা থেকে উঁচু করায় গাড়ি চলতে অসুবিধা হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের উচিত এগুলোর দিকে নজর দেয়া। অন্যদিকে, আগারগাঁও, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মিরপুর ১০ নং সেকশনের রাস্তাগুলোও ভেঙ্গে একাকার হয়ে আছে। বৃষ্টিতে কোনো কোনা রাস্তা পানি তলিয়ে যাওয়ায় বিপদ আরও বেড়েছে।
জানা গেছে, রাজধানীর যে কোনো অংশে রাস্তা কেটে উন্নয়নমূলক কাজ করতে হলে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন থেকে অনুমতি নিতে হয়। সরকারি সংস্থারও রাস্তা কাটার সময় সিটি করপোরেশনকে নির্ধারিত ফি দিতে হয়। ডিএনসিসি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাস্তা খনন ফি হিসেবে পেয়েছে ৩২ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরে সংস্থাটি এ খাত থেকে ৫০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ডিএসসিসি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাস্তা খনন ফি হিসেবে পেয়েছে ২৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে রাস্তা খননের ফি হিসেবে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে ২৫ কোটি টাকা। অথচ বছরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ির পর রোকেয়া সরণির রাস্তাটি মেরামত করেনি ডিএনসিসি। এই রাস্তায় চলাচলকারী মানুষের দুর্ভোগ নিত্যদিনের।
সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, ঢাকা শহরের কোনো সড়কের পাঁচ থেকে ১০ টনের ওপরে ভার নেওয়ার সক্ষমতা নেই। কিন্তু বাস্তবে ৪০ টনের যানবাহনও চলাচল করে। রাজধানীর রামপুরা-আমুলিয়া সড়কের ভার বহনের ক্ষমতা পাঁচ টন। সেই রাস্তায় চলে ৩০-৪০ টন পণ্যবাহী লরি- ট্রেইলর। এতে অল্প দিনেই রাস্তাটি ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মিরপুর-কালশী সড়কে বৃষ্টি হলেই জমে যায় কোমর পরিমাণ পানি। আর টানা বৃষ্টি আর পানিবদ্ধতায় রাস্তার বিটুমিন উঠে গিয়ে পুরো রাস্তাজুড়ে তৈরি হয়েছে গর্ত। এই ভাঙাচোরা রাস্তাগুলোতে গাড়ি চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চালকদের। আলাপকালে ঢাকার পরিবহন ব্যবসায়ীদের একজন বলেন, ঢাকা শহরে এখন যেগুলো বাস বা মিনিবাস চলাচল করছে সেগুলোর বয়স ৫ বছরের বেশি নয়। বেশিরভাগ গাড়িই নতুন। কিন্তু শুধুমাত্র রাস্তার কারণে গাড়িগুলো লক্কর ঝক্কর হয়ে গেছে। ওই মালিক বলেন, এই রাস্তায় গাড়ি চালানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। এমনিতেই সারা দিন যানজট লেগে থাকে। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় যাতায়াতে যেমন সময় লাগছে, আবার ঝুঁকিপূর্ণও হয়ে গেছে। গাড়ির চাকা গর্তে পড়ে টায়ার কেটে যাচ্ছে। শুধু গাড়ি চলাচল নয়, খানাখন্দে ভরা রাস্তার কারনে স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীদেরও দারুন কষ্ট হচ্ছে। বৃষ্টিতে রাস্তা ডুবে থাকায় শিশুদেরকে ভ্যানে করে স্কুলে পাঠাতে পারছেন না অবিভাবকরা। আবার পায়ে হেঁটে বা রিকশায় গেলেও বিপদ। এমতবস্থায় সবাই সঙ্কটের মধ্যে পড়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষা এলেই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু করে নগরীর ইউটিলিটি বিভাগগুলো। এটা বন্ধ করা দরকার। বিশেষ করে সমন্বয়হীনতার কারণে রাস্তাগুলো বেহাল দশায় পড়েছে। এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল হাসান বলেন, বর্ষায় উন্নয়ন কাজ করা উচিত নয়। এ নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সরাসরি নির্দেশনা আছে। বর্ষায় শুধু মেরামত কাজ করা যাবে। কিন্তু কেউই তা মানে না। এ জন্যই এই দুর্দশা।